তাফসীর করতে কী কী যোগ্যতা লাগে ?

উপস্থাপনা:
আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য কুরআন নাজিল করেছেন। কুরআনের অর্থ ঠিকভাবে বোঝার জন্য তাফসীর জানা দরকার। তাফসীর করতে হলে একজন মুফাসসিরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জ্ঞান থাকতে হয়। যদি এই জ্ঞান না থাকে, তাহলে তিনি ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারেন, যা খুব বিপজ্জনক হতে পারে।

 

একজন মুফাসসিরের যে জ্ঞান থাকা দরকার:
ইলমে নাহুর (বাক্যের গঠন জানার) জ্ঞান: বাক্যের গঠন বুঝতে না পারলে কুরআনের অর্থ ভুল হতে পারে।
আরবি ভাষার জ্ঞান: কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে। তাই মুফাসসিরকে আরবি ভাষা ভালোভাবে জানতে হবে।
ইলমে ছরফ (শব্দের পরিবর্তন বোঝার) জ্ঞান: অনেক সময় একটি শব্দের রূপ বদলালে অর্থও বদলে যায়। তাই এটি জানা দরকার।
শব্দের মূল অর্থ জানা: একটি শব্দ কোথা থেকে এসেছে, সেটি বুঝতে পারলে আসল অর্থ বের করা সহজ হয়।
ইলমুল বালাগাত (বাক্যের সৌন্দর্য) বোঝার জ্ঞান: কুরআনের ভাষা খুব সুন্দর। এটিকে ভালোভাবে বুঝতে হলে ভাষার শৈলী জানতে হবে।
শব্দের অর্থ গভীরভাবে বোঝার জ্ঞান: কুরআনে অনেক শব্দের ভেতরের অর্থ লুকিয়ে থাকে, যা জানা দরকার।
ভাষার সৌন্দর্য বোঝা: কুরআনের ভাষা শুধু অর্থ নয়, সৌন্দর্যও বহন করে। সেটি বুঝতে পারলে কুরআন আরো ভালোভাবে বোঝা যায়।
কুরআন পাঠের নিয়ম জানা: কুরআন পড়ার ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম আছে, যা জানলে অর্থ স্পষ্ট হয়।
ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান: কিছু আয়াত দেখতে একরকম মনে হলেও তাদের ভেতরে গভীর অর্থ আছে, যা সঠিকভাবে বুঝতে হয়।
ইলমুল ফিকহের (ইসলামের আইন) জ্ঞান: কুরআন থেকে কীভাবে বিধান বের করতে হয়, সেটি জানা দরকার।

 

এই জ্ঞান না থাকলে কী হবে?
সঠিক অর্থ জানা যাবে না: আরবি না জানলে কুরআনের সঠিক অর্থ বোঝা সম্ভব নয়।
ভুল তাফসীর হতে পারে: বাক্যের গঠন না বুঝলে অর্থের পরিবর্তন হয়, যা কখনো কখনো মারাত্মক ভুল করতে পারে।
অজ্ঞতা প্রকাশ পাবে: শব্দের পরিবর্তন বোঝার ক্ষমতা না থাকলে মানুষ অজ্ঞ মনে করবে।
ভুল তাফসীর হবে: ভাষার সৌন্দর্য ও শৈলী না জানলে কুরআনের আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।
কুরআন পড়তেও ভুল হতে পারে: যদি কুরআনের পাঠের নিয়ম না জানা থাকে, তাহলে কেউ সঠিকভাবে কুরআন পড়তে পারবে না।

 

সাহাবীর ঘটনা থেকে শিক্ষা:
একবার এক আয়াত নাজিল হলো যেখানে বলা হয়েছিল: ﻭَﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٧  তোমরা খাও ও পান কর, যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। (সূরা আল-বাকারা: ১৮৭) একজন সাহাবী, আদী ইবন হাতেম (রা.), এই আয়াত শুনে ভাবলেন যে এখানে “সাদা ও কালো রেখা” মানে সত্যিকারের সাদা ও কালো সুতা। তাই তিনি একটি সাদা সুতা ও একটি কালো সুতা নিয়ে নিজের বালিশের নিচে রাখলেন। তিনি রাতের বেলা বারবার সুতা দুটি দেখলেন, কিন্তু পার্থক্য বুঝতে পারলেন না। সকাল হলে তিনি নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি বালিশের নিচে সাদা ও কালো দুটি সুতা রেখেছিলাম, কিন্তু ফজর কখন হলো বুঝতে পারিনি! এ কথা শুনে নবীজি হেসে বললেন,তাহলে তো তোমার বালিশ অনেক বড়! এখানে আসলে সাদা ও কালো সুতা বলা হয়নি। বরং, রাতের অন্ধকার আর দিনের আলোকে বোঝানো হয়েছে!

 

আমরা কী শিখলাম?
এই ঘটনা থেকে বুঝতে পারি, কুরআনের আয়াত ভালোভাবে বুঝতে হলে গভীর জ্ঞান থাকা দরকার। শুধু সরাসরি শব্দ দেখলেই হবে না, বরং আয়াতের আসল অর্থ বুঝতে হবে। এজন্যই কুরআনের তাফসীর জানা খুব জরুরি।

ইলমুল আরবী, নাহু, সরফ, ইশতিকাক, কিরাত, ফিকহ, শানে নুযুল, হাদিস, বালাগাত, মাআানি, বায়ান, বদি

 

 

হাফেজ মুহাম্মদ ছাদিকুল কারীম
অনলাইন কুরআন শিক্ষক
+8801830761386

Scroll to Top

Start Your Free Trial Now